সামাজিক মিডিয়া আপোলো হাসপাতাল থেকে কথা বলুন:

Breadcrumb Images
অ্যাপোলো হাসপাতালকার্যপ্রণালীকরোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাম

করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাম

করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাম কাকে বলে?
করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাম হল এমন এক টেকনিক যেখানে এক্স-রে ইমেজিং ব্যবহার করে আপনার হৃৎপিণ্ডের রক্তনালীগুলোকে, যেগুলোকে করোনারি আর্টারি বলা হয়, দেখা হয়। হৃৎপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ বাধা পাচ্ছে কি না তা দেখার জন্য এই টেস্ট করা হয়।
করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাম হল কার্ডিয়াক ক্যাথিটারাইজেশন নামে পরিচিত প্রসিডিওরের একটা ইউনিভার্সাল গ্রুপ। কার্ডিয়ার ক্যাথিটারাইজেশন প্রসিডিওর হৃৎপিণ্ড ও রক্তনালীগুলোর অবস্থা নিরূপণ করে সেগুলোর চিকিৎসাও করতে পারে। হৃৎপিণ্ডের অবস্থাকে নিরূপণ করার কাজে সহায়ক করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাম হল কার্ডিয়াক ক্যাথিটারাইজেশন প্রসিডিওরের সবচেয়ে প্রচলিত একটা প্রকার।
করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাম করার সময় আপনার হৃৎপিণ্ডের রক্তনালীগুলোতে এক ধরনের ডাই ইনজেক্ট করে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এই ডাইকে এক্স-রে মেশিন দিয়ে শনাক্ত করা যায়। এক্স-রে মেশিন খুব দ্রুত পর্যায়ক্রমিক ভাবে বেশ কয়েকটা ইমেজ তুলে নেয় (অ্যাঞ্জিওগ্রাম), এগুলোতে রক্তনালীকে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে দেখতে পাওয়া যায়। প্রয়োজন হলে আপনার ডাক্তার করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রামের এই একই সেশনে আপনার বুজে থাকা হৃৎপিণ্ডের ধমনীগুলোকে (ক্লগ থাকা হার্ট আর্টারি) খুলে দিতে পারেন।
করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাম
করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাম কেন করা হয়?
সচরাচর এইসব কারণগুলোতে আপনার ডাক্তার আপনাকে করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাম করানোর পরামর্শ দিতে পারেন:
করোনারি আর্টারি রোদের লক্ষণগুলো হল বুকে ব্যথা (অ্যাঞ্জিনা)
আপনার বুকে, চোয়ালে, ঘাড়ে বা হাতে ব্যথা, যে ব্যথার কারণ অন্য কোনও টেস্টে ধরা পড়ে না।
নতুন বা ক্রমশ বাড়তে থাকা বুকে ব্যথা (আনস্টেবল অ্যাঞ্জিনা)
জন্মগত ভাবে আপনার হৃৎপিণ্ডে কোনও সমস্যা থাকলে (কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ)
নন-ইনভেসিভ হার্ট স্ট্রেস টেস্টে অস্বাভাবিক রেজাল্ট
রক্তনালীর অন্য কোনও সমস্যা বা বুকে আঘাত
হার্ট ভাল্ভের এমন কোনও সমস্যা যা সারাতে সার্জারির প্রয়োজন
এই ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ইনভেসিভ হয় বলে নন-ইনভেসিভ হার্ট টেস্ট, যেমন ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম, ইকোকার্ডিওগ্রাম বা স্ট্রেস টেস্ট না-করা পর্যন্ত এই টেস্ট করা হয় না।
আপনি নিজেকে কী ভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
সামান্য কিছু ক্ষেত্রে আপৎকালীন ভিত্তিতে করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাম করা হয়ে থাকে। সমস্ত রকম ক্ষেত্রে আগে থেকে দিনক্ষণ ঠিক করা হয়, আপনাকে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সময় দেওয়া হয়।
অ্যাঞ্জিওগ্রাম করা হয় হাসপাতালের ক্যাথিটারাইজেশন (ক্যাথ) ল্যাবে। আপনার স্বাস্থ্য পরিচর্যা টিম আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলার কথা বলবেন এবং আপনি আগে থেকে কোনও ওষুধ খেয়ে থাকলে সে সম্পর্কেও আপনার সঙ্গে কথা বলবে।
সাধারণ নির্দেশিকা:
আপনার অ্যাঞ্জিওগ্রাম করার আগের মাঝরাতের পর কোনও কিছু খাবেন না বা পানীয়ও খাবেন না।
আপনার সমস্ত ওষুধপত্র নিজের সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যান। ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করে নিন, আপনি সাধারণত যেসব ওষুধ খান সেগুলো সঙ্গে নিয়ে আসবেন কি না।
আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে তাহলে আপনার ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করে নিন যে আপনার অ্যাঞ্জিওগ্রামের আগে আপনাকে ইনসুলিন নিতে হবে কি না বা অন্য কোনও ওষুধ খেতে হবে কি না।
আপনার যদি কোনও অ্যালার্জি থাকে, তাহলে সে কথা অবশ্যই আপনার ডাক্তারকে জানাবেন। আপনার যদি আগে কখনও ইন্ট্রাভেনাস কনট্রাস্ট মিডিয়াম (কিডনির এক্স-রে ও সিটি স্ক্যানে ব্যবহার করা ডাই)-এর জন্য কোনও সমস্যা হয়েছে তাহলে সেটা আপনার ডাক্তারকে অবশ্যই বলবেন।
আপনার হাতে বা কুঁচকিতে বড় আর্টারি ব্যবহার করে সাধারণত এই প্রসিডিওর করা হয় বলে আপনাকে ওই জায়গার লোম কামিয়ে নেওয়ার কথা বলা হতে পারে। উদ্বেগ কাটানোর জন্য আপনাকে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হতে পারে।
টিম আপনার শরীর পরীক্ষা করে দেখবে এবং আপনার ভাইটাল সাইন, যেমন রক্তচাপ, নাড়ী পরীক্ষা করে দেখবে।
আপনাকে মূত্রত্যাগ করে এসে হাসপাতালের গাউন পরে নিতে হবে। আপনাকে কনট্যাক্ট লেন্স, চশমা, গয়না ও চুলের পিন খুলে রাখতে হতে পারে।
অ্যাঞ্জিওগ্রামের সময় কী হয়?
রুগিকে/রুগির দেখভালের জন্য থাকা ব্যক্তিকে অ্যাঞ্জিওগ্রামের প্রক্রিয়ার কথা সংক্ষেপে বোঝানোর পর তাঁর থেকে সম্মতি নেওয়া হয়।
আপনাকে এক্স-রে টেবিলে, সাধারণত চিৎ হয়ে, শুতে বলা হয়। আপনার কার্ডিওলজিস্ট আপনাকে ঘুমের ওষুধ বা ব্যাথা কমানোর ওষুধ দেওযার জন্য আপনার হাতের বাহুর শিরায় সুঁচ ফোটাতে পারে। আপনার বুকে ও আঙুলে মনিটরিং ডিভাইস লাগিয়ে রাখা হতে পারে এবং আপনার নাকে ছোট ছোট নল লাগিয়ে আপনাকে অক্সিজেনও দেওয়া হতে পারে। ঠিক যে জায়গাটায় ইনসার্সন হবে, সম্ভবত হাতের বাহুতে বা কুঁচকিতে, সেখানকার পাশের ত্বককে অ্যান্টিসেপ্টিক দিয়ে পরিষ্কার করা হবে। তারপর আপনার বাকি শরীরকে থিয়েটার টাওয়েল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হবে।
ত্বক ও আর্টারির ডিপ টিস্যুগুলো অবশ হয়ে যেতে পারে লোকাল অ্যানেস্থেটিকের জন্য এবং আর্টারিতে একটা সুঁচ ফোটানো হবে। কার্ডিওলজিস্ট যখন নিশ্চিত হবেন যে এটা ঠিক মতো বসানো হয়েছে, তখন সুঁচের মধ্য দিয়ে আর্টারিতে একটা গাইড ওয়ায়র বসানো হবে। তারপর সুঁচটা সরিয়ে নেওয়া হবে এবং ক্যাথিটার নামক পাতলা প্লাস্টিকের টিউবকে ওয়ায়রের উপরে ও আর্টারিতে রাখা হবে।
ক্যাথিটার ও ওয়ায়র ঠিক জায়গায় বসেছে কি না দেখার জন্য কার্ডিওলজিস্ট এক্স-রে সরঞ্জাম ব্যবহার করেন এবং তার পর ওয়ায়র সরিয়ে নেওয়া হয়।কার্ডিওলজিস্ট একবার সন্তুষ্ট হয়ে যায় যে এটি সঠিকভাবে অবস্থিত, একটি গাইড তারের সূঁচের মাধ্যমে এবং ধমনীতে রাখে। তারপরে সুইটি প্রত্যাহার করা হয়, একটি ক্যাথেটার নামক একটি সূক্ষ্ম প্লাস্টিকের নলকে তারের ওপরে এবং ধমনীতে রেখে দেওয়া হয়।
এরপর ক্যাথিটারের মধ্য দিয়ে একটা স্পেশ্যাল ডাই, কনট্রাস্ট মিডিয়াম, ইনজেক্ট করা হয় এবং এক্স-রে নেওয়া হয়। এক্স-রে ইমেজে এই ডাইকে সহজেই দেখা যায়। এই ডাই আপনার রক্তনালীর মধ্য দিয়ে যেতে থাকে, ডাক্তার তখন এই প্রবাহে দিকে খেয়াল রেখে শনাক্ত করেন যে কোনও ব্লকেজ বা কোনও জায়গা সঙ্কুচিত হয়ে আছে কি না।
আপনার অ্যাঞ্জিওগ্রামের সময় আপনার ডাক্তার যা দেখতে পাবেন, তার ভিত্তিতে ওই একই সময়ে আপনাকে হয়তো অতিরিক্ত ক্যাথিটার প্রসিডিওরের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। যেমন সংকীর্ণ আর্টারি খোলার জন্য বেলুন অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি বা স্টেন্ট প্লেসমেন্ট। কার্ডিওলজিস্ট যখন বলবেন যে এক্স-রে করে রেজাল্ট ঠিক মতো পাওয়া গেছে এবং রুগির থেকে প্রয়োজনীয় সব তথ্য নেওয়া হয়ে গেছে, তখন ক্যাথিটার খুলে নেওয়া হয়।
আপনার অ্যাঞ্জিগ্রামের সময় আপনার ডাক্তার কী আবিষ্কার করেছেন তার উপর নির্ভর করে আপনার একই সময়ে অতিরিক্ত ক্যাথেটার পদ্ধতি থাকতে পারে, যেমন একটি বেলুন অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি বা সংকীর্ণ ধমনীটি খোলার জন্য স্টেন্ট প্লেসমেন্ট।
একবার হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ সব যথাযথ এক্স-রে ফলাফল এবং সব তথ্যের প্রয়োজন রোগীর থেকে প্রাপ্ত হয়েছে ascertains, মূত্রনিষ্কাশনযন্ত্র সরানো হবে।
এতে কত সময় লাগে?
প্রত্যেক রুগির অবস্থা আলাদা আলাদা হয় এবং প্রসিডিওর কতখানি জটিল বা কতখানি সোজাসাপটা হবে তা অনুমান করা সব সময় সহজ হয় না। প্রসিডিওরের লোকেশন অনুযায়ী, যেমন পায়ে বড় আর্টারি ব্যবহার করা হলে 45 মিনিট থেকে এক ঘণ্টা লাগতে পারে এবং ছোট আর্টারি ব্যবহার করলে তা বেশি জটিল হয় এবং সময়ও লাগে বেশি। এক্স রে কক্ষে সব মিলিয়ে দুই ঘণ্টা থাকতে হতে পারে এবং গড় ফ্লুরো টাইম হল 10 মিনিটের কম।
এর পর কী হয়?
আপনাকে হুইচেয়ারে/স্ট্রেচারে করে আপনার রিকভারি এরিয়াতে নিয়ে আসা হবে। কোনও সমস্যা যাতে না-থাকে তার জন্য নার্সরা রুটিন অবজার্বেশন করবেন, যেমন আপনার নাড়ী টিপে দেখবেন এবং আপনার রক্তচাপের মাত্রা পরীক্ষা করে দেখবেন। যেখানে ছেদ করা হয়েছিল, সেখান থেকে রক্ত যাতে না-পড়তে থাকে সেটাও খেয়াল করে দেখবেন তাঁরা। আপনি সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে না-আসা পর্যন্ত আপনাকে সাধারণত কয়েক ঘণ্টা বিছানাতেই শুয়ে থাকতে হতে পারে। আপনাকে হয়তো ওই দিনই বাড়ি যেতে দেওয়া হবে বা আপনাকে রাতটা হাসপাতালেই রাখা হবে।
রুগির প্রসন্নতা বাড়ানোর জন্য অ্যাপোলো হাসপাতালে ডেকেয়ার অ্যাঞ্জিওগ্রামের উপর জোর দেওয়া হয়। এর ফলে হাসপাতালে বেশিক্ষণ থাকতে হয় না এবং কোনও ঝঞ্ঝাট ছাড়াই সমস্ত পরিচর্যা দেওয়া যায় এবং দিনে-দিনেই হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।
পরীক্ষা-নিরীক্ষর ফল আপনি কখন পাবেন?
আপনার প্রথম ভিজিটের পরই স্ক্যান করা হবে এবং যা যা জানতে পারা যাবে সে-সবের প্রিন্টেড রিপোর্ট আপনাকে সিডি-তে করে দেওয়া হবে।
আপনার রক্তনালীতে কী সমস্যা আছে তা দেখিয়ে দেয় অ্যাঞ্জিওগ্রাম। এটা দেখাতে পারে:
চর্বির পরতের জন্য আপনার কতগুলো করোনারি আর্টারি ব্লক বা সংকীর্ণ হয়ে আছে (অ্যাথিরোস্ক্লেরোসিস)।
আপনার রক্তনালীর ঠিক কোথায় ব্লক আছে।
আপনার রক্তনালীর মধ্যে কতখানি রক্তপ্রবাহ বাধা পাচ্ছে।
পূর্ববর্তী করোনারি বাইপাস সার্জারির ফলাফলগুলো।
আপনার হৃৎপিণ্ড ও রক্তনালীর মধ্যে হওয়া রক্তপ্রবাহ।
এইসব তথ্য জানতে পারলে আপনার ডাক্তারের পক্ষে এই সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয় যে কোন চিকিৎসাটা আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত হবে এবং আপনার হৃদযন্ত্রের পরিস্থিতি কতখানি ঝুঁকি নিয়ে আসতে পারে আপনার স্বাস্থ্যের পক্ষে। আপনার ফলাফলের উপর নির্ভর করে আপনার ডাক্তার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে মেডিক্যাল ম্যানেজমেন্ট করালে না কি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করালে না কি করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফ্ট সার্জারি করালে আপনার পক্ষে ভাল হবে।

Quick Book

Request A Call Back

X