সামাজিক মিডিয়া আপোলো হাসপাতাল থেকে কথা বলুন:

Breadcrumb Images
অ্যাপোলো হাসপাতালকার্যপ্রণালীকরোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফ্ট সার্জারি

করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফ্ট সার্জারি

CABG বা বাইপাস সার্জারি কাকে বলে?
করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফ্টিং (CABG) হল এমন এক সার্জারি যা করালে করোনারি আর্টারির মধ্য দিয়ে হৃদযন্ত্রে রক্তপ্রবাহকে বাড়ানো যায়। যাঁরা গুরুতর করোনারি হার্ট ডিজিজে (CHD), যাকে করোনারি আর্টারি ডিজিজও বলা হয়, ভোগেন, তাঁদের জন্যই এই চিকিৎসা।
CHD এমন এক অসুখ, যা হলে প্লেক নামের একটা উপাদান করোনারি আর্টারির ভিতরে জমা হয়। এই আর্টারিগুলোই আপনার হৃদযন্ত্রে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত সরবরাহ করে। রক্তে থাকা চর্বি, কোলেস্টেরল, ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য পদার্থ দিয়েই এই প্লেক তৈরি হয়। এই প্লেক করোনারি আর্টারিগুলোকে সংকীর্ণ করে দেয় বা ব্লক করে দেয় এবং হৃদযন্ত্রের পেশিতে রক্তপ্রবাহকে কম করে দেয়। ব্লকেজ খুব গুরুতর হলে অ্যাঞ্জিনা, শ্বাসকষ্ট ও কোনও কোনও ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক পর্যন্ত হতে পারে। হৃদযন্ত্রের পেশিতে সর্বাপেক্ষা অনুকূল অবস্থার রক্তপ্রবাহ না-হলে বুকে যে-ব্যথা হয় বা অস্বস্তি হয়, তাকেই বলে অ্যাঞ্জিনা।
CHD-র জন্য CABG হল এক প্রকার চিকিৎসা। CABG করার সময় আপনার শরীরের সুস্থ একটি আর্টারি বা শিরাকে ব্লক হয়ে থাকা করোনারি আর্টারির সঙ্গে যুক্ত করা হয় বা সেখানে গ্রাফ্ট (কলম) করা হয়। যে আর্টারি বা শিরাকে গ্রাফ্ট করা হয় সেটা করোনারি আর্টারির ব্লক থাকা অংশকে বাইপাস (চারদিকে ঘোরে) করে। এই ভাবে নতুন পথ তৈরি হয় এবং ব্লকেজের চারদিকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত প্রবাহিত হয়ে হৃদযন্ত্রের পেশিতে চলে যায়।
CABG কেন করা হয়?
আপনার জন্য করোনারি বাইপাস সার্জারি ঠিক হবে না আর্টারি খোলার বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করা ঠিক হবে তা নিয়ে আপনার ডাক্তার আপনার সঙ্গে কথা বলে নেবেন।
করোনারি বাইপাস সার্জারি করা হয় তখনই, যখন:
আপনার হৃদযন্ত্রে রক্ত সরবরাহ করা বেশ কয়েকটা আর্টারি সংকীর্ণ হয়ে গেলে আপনার যখন প্রচণ্ড বুকে ব্যথা হয়, এ রকম হলে হালকা ব্যায়াম করলেও এমনকী বিশ্রাম নিতে থাকলেও পেশিতে রক্ত কমে যায়। অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি ও স্টেন্ট বসালে কাজে দেবে ঠিকই, কিন্তু কোনও কোনও ধরনের ব্লকেজের ক্ষেত্রে করোনারি বাইপাস সার্জারি করাটাই সবচেয়ে ভাল উপায়।
আপনার একাধিক করোনারি আর্টারি অসুস্থ হয়ে যায় এবং হৃদযন্ত্রে রক্ত সরবরাহকারী প্রধান প্রকোষ্ঠ, যাকে বাম নিলয় বলা হয়, ভাল করে কাজ করে না।
আপনার বাঁদিকের মূল করোনারি আর্টারি গুরুতর ভাবে সংকীর্ণ বা ব্লক হয়ে গেলে। এই আর্টারিই বাম নিলয়ে বেশির ভাগ রক্ত সরবরাহ করে থাকে।
আপনার বর্তমান ব্লকেজের ক্ষেত্রে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করাটা উপযুক্ত না-হলে, আগে আপনার অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি হয়ে থাকলে এবং স্টেন্ট বসানো হলেও তা সফল না-হলে, বা আপনার হৃদযন্ত্রে স্টেন্ট বসানো হলেও আর্টারি আবার সংকীর্ণ (রেস্টেনসিস) হয়ে গেলে।
আপৎকালীন পরিস্থিতিতে, যেমন হার্ট অ্যাটাক হলে ডাক্তার যদি দেখেন যে আপনার উপর অন্য কোনও চিকিৎসা কাজে আসছে না, তখনও করোনারি বাইপাস সার্জারি করা হতে পারে।
মূল যে-হৃদরোগের জন্য ব্লকেজ হয়েছে সেই রোগকে প্রথমবারেই এই সার্জারি সারিয়ে দেয় না। তাই আপনার করোনারি বাইপাস সার্জারি হলেও সার্জারির পরে নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনাটা একান্ত দরকার। আপনার রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কম রাখার জন্য, রক্ত জমাট বাঁধা বা ব্লাড ক্লটের আশঙ্কাকে কমানো জন্য এবং যথাসম্ভব আপনার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়াকলাপকে ঠিক রাখার জন্য নিয়মিত ওষুধ খেয়ে যেতে হবে।
CABG-র জন্য কী ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করবেন?
সার্জারির জন্য প্রস্তুত হওয়ার জন্য ডাক্তার আপনাকে সার্জারির আগে খাওয়াদাওয়ায় কোনও বাধা নিষেধ ও পরিবর্তন সম্পর্কে বা ওষুধপত্র খাওয়ার ব্যাপারে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলার কথা বলবেন। সার্জারির আগে আপনাকে বেশ কিছু টেস্ট করাতে হবে। যেমন বুকের এক্স-রে, রক্ত পরীক্ষা, ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম ও করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাম। করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাম হল এক ধরনের এক্স-রে পদ্ধতি, এই পদ্ধতিতে ডাই ব্যবহার করে করোনারি আর্টারিগুলোকে দেখা হয়ে থাকে। সার্জারির এক-দু দিন আগে আপনাকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কথা বলা হতে পারে এবং অ্যান্টি-প্লেটেলেট নিচ্ছেন তাহলে সার্জারির আগে তিন থেকে সাতদিন অবধি অ্যান্টি-প্লেটেলেট নিতে বারণ করা হবে আপনাকে।
সার্জারির পর বেশ কয়েক সপ্তাহ অবশ্যই হাতে রাখবেন। গাড়ি চালানো, কাজে ফেরা ও দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে পারার মতো অবস্থায় পৌঁছনোর মতো করে সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য আপনার চার থেকে ছয় সপ্তাহ লাগবে।
প্রসিডিওরের সময় আপনার কী হবে
প্রক্রিয়া চলাকালীন
করোনারি বাইপাস সার্জারিতে জেনারেল অ্যানাস্থেসিয়ার প্রয়োজন হয়। আপনার হৃদযন্ত্রের ব্লকেজের অবস্থান ও গুরুতর অবস্থার ভিত্তিতে ঠিক করা হবে যে কতগুলো বাইপাস করার প্রয়োজন হবে।
বুকের হাড় বরাবর আপনার বুকের মাঝখানটা চিরে দেবেন সার্জন। তারপর হৃদযন্ত্রটাকে দেখতে পাওয়ার জন্য পাঁজরাটাকে মেলে দিয়ে খুলে দেবেন।এই সার্জারির আগেকার পদ্ধতিতে বুকটাকে মেলে খুলে দেওয়ার পরই হৃৎপিণ্ড সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে যেত, তখন শরীরে রক্ত সরবরাহ করানোর জন্য হার্ট-লাং মেশিনকে কাজে লাগানো হত।আজকাল বেশির ভাগ CABG প্রসিডিওরই হল অফ-পাম্প বা বিটিং হার্ট সার্জারি। এই প্রসিডিওরে হৃদযন্ত্র ধুকপুক করতে থাকা অবস্থাতেই সার্জারি করতে পারা যায়। এর জন্য একটা বিশেষ সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়। সার্জন হৃদপিণ্ডের যে-অংশে সার্জারি করছেন, শুধু সেই অংশকেই স্থির করে রাখে এই সরঞ্জাম।
স্পেশ্যালিস্ট প্রায়ই বুকের প্রাচীরের ভিতর (ইন্টারন্যাল ম্যামারি আর্টারি) থেকে বা পায়ের নীচের অংশ থেকে সুস্থ রক্তনালীর একটা অংশ নিয়ে তার দুটো প্রান্তকে ব্লক হয়ে থাকা আর্টারির উপরে ও নীচে লাগিয়ে দেন, যাতে অসুস্থ আর্টারির সংকীর্ণ অংশের চার দিকে রক্তপ্রবাহ করানো যায় (বাইপাস)।
আপনার সার্জন অন্যান্য সার্জিক্যাল প্রসিডিওরও ব্যবহার করতে পারেন। যেমন মিনিম্যালি ইনভেসিভ করোনারি বাইপাস সার্জারি। এই প্রসিডিওর বা পদ্ধতিতে সার্জন রুগির বুকে আরও ছোট ছেদ করে করোনারি বাইপাস করে থাকেন। প্রায়ই রোবোটিক ও ভিডিও ইমেজিঙের সাহায্যে ছোট্ট অংশটায়ে সার্জন অপারেশন করে থাকেন। মিনিম্যালি ইনভেসিভ সার্জারির একেক প্রকারকে একেক নামে ডাকা হয়। যেমন পোর্ট অ্যাক্সেস বা কি-হোল সার্জারি।
প্রসিডিওরের পর
করোনারি বাইপাস সার্জারি হল একটা বড় অপারেশন। করোনারি বাইপাস সার্জারির পর দুদিন ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে থাকতে হতে পারে। এখানে আপনার হৃদযন্ত্র, রক্তচাপ, নিঃশ্বাস ও অন্যান্য ভাইটাল সাইনের উপর অনবরত নজর রাখা হবে।
সার্জিরির ঠিক পরেই
CABG প্রসিডিওরের সময় জেনারেল অ্যানেস্থেসিয়া করা হয়, তাই আপনি হয়তো সার্জারির পরেও বেশ কয়েক ঘণ্টা অচেতন অবস্থায় থাকতে পারেন। আপনি অচেতন থাকা অবস্থাতেই আপনাকে হয়তো ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে নিয়ে যাওয়া হবে। গুরুত্বপূর্ণ সার্জারি যাঁদের হয়, তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে স্পেশ্যাল ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। এর জন্য আগে থেকেই ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করে রাখা হয়। এই ইুনিটে আপনাকে এক থেকে তিন দিন পর্যন্ত থাকতে হতে পারে। এর চেয়ে বেশি দিন থাকা মানে এই নয় যে আপনার CABG সফল হয়নি। উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে, এর মানে এ-ও হতে পারে যে, আপনার অ্যানেস্থেসিয়ার প্রভাব পুরো কাটার জন্য বা আপনার বুক থেকে ফ্লুইড পুরো বেরিয়ে যাওয়ার জন্য বেশি দিন লাগছে।
আপনি জেগে ওঠার পর বেশ কিছু সংবেদনশীলতা আপনি হয়তো অনুভব করবেন। আপনার হয়তো মনে হবে যে আপনি খুব টলছেন। অ্যানেস্থেসিয়ার জন্য আপনার গা গোলাবে, তাই আপনার পেট খারাপ লাগতে পারে। আপনি জেগে উঠেই হয়তো খেয়াল করবেন যে আফনি কোনও কিছু গিলতে পারছেন না বা কথা বলতে পারছেন না, কেননা আপনার নিঃশ্বাস নেওয়ার সুবিধার জন্য আফনার গলায় টিউব বসানো আছে।
অ্যানেস্থেসিয়ার ফলে CABG সার্জারির জন্য হওয়া অস্বস্তি ভাব সাধারণত কেটে গেলেও আপনি ঘুম থেকে ওঠার পরেও কিছু ব্যথা অনুভব করতে পারেন। এই অস্বস্তি কাটানোর জন্য আপনার নার্স আপনাকে সার্জারির পর সরাসরি ইন্ট্রাভেনাস (IV)-র মাধ্যমে ব্যথা কমানোর ওষুধ দেবেন।
ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট থেকে বেরিয়ে আসা
আপনার অবস্থার উন্নতি হলে আপনাকে স্পেশ্যালাইজড ওযার্ড থেকে রেগুলার কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিটে নিয়ে যাওয়া হবে, কখনও কখনও এটাকে স্টেপ-ডাউন ইউনিট বলা হয়ে থাকে। আপনাকে সাধারণত এখানে নিয়ে যাওয়া হয়, যখন:
আপনার ব্রিদিং টিউব খুলে ফেলা হয়।
আপনি মুখ দিয়েই ওষুধ খেতে পারেন।
ইনভেসিভ টিউব ও মনিটরিং কমানো হয়। আপনার মূত্রস্থলীর সঙ্গে যুক্ত করে রাখা ইউরিনারি ক্যাথিটাররের তখন আর প্রয়োজন হয় না।
আপনি স্টেপ-ডাউন ইউনিটে থাকার সময় আপনি বিছানা থেকে উঠে পায়চারি করতে পারবেন।
কোনও জটিলতা না-থাকলে আপনাকে আট দিনের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে (দুই বা তিন দিন আইসিইউ-তে এবং দুই থেকে তিন দিন ওয়ার্ডে), হাসপাতাল থেকে ফিরে আসার পরেও আপনার দৈনন্দিন কাজকর্ম করার ক্ষেত্রে বা এমনকী সামান্য হাঁটাচলা করতেও সমস্যা হতে পারে।
পুরো সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য প্রায় ছয় থেকে বারো সপ্তাহ লাগতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চার থেকে ছয় সপ্তাহ পরেই আপনি কাজে ফিরতে পারবেন, ব্যায়াম করতে পারবেন এবং যৌনক্রিয়া শুরু করতে পারেন। কিন্তু এসব করার আগে অবশ্যই ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করে নেবেন যে এসব করতে পারবেন কি না।
ফল
সার্জারির পর বেশির ভাগ রুগিই আগের চেয়ে সুস্থ অনুভব করেন এবং 10 থেকে 15 বছর অবধি কোনও উপসর্গ দেখা যায় না তাঁদের মধ্যে।
CABG-র পরের জীবন
বাইপাস সার্জারি করালে হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহ আগের চেয়ে ভাল হলেও করোনারি আর্টারি রোগকে এটা সারায় না। আপনার ফল ও দীর্ঘমেয়াদি সুফল প্রাপ্তি নির্ভর করে অংশত এই সব ব্যাপারগুলোর উপর। যেমন রক্ত জমাট বাঁধতে না-দেওয়া, রক্তচাপ কম করা, কোলেস্টেরল কম করা এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ডাক্তারের বলে দেওয়া নিয়ম মেনে ওষুধপত্র খেয়ে যেতে হবে। এবং নিম্নলিখিত স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন করার নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে। যেমন:
ধূমপান ছাড়তে হবে
স্বাস্থ্যসম্মত খাওয়াদাওয়া করতে হবে, যেমন DASH ডায়েট মেনে চলা
ওজন ঠিক রাখা
নিয়মিত ব্যায়াম করা
মানসিক চাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখা
হাসপাতাল ও আপনার মেডিক্যাল টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করুন বা 1066 নম্বরে ফোন করুন, যদি:
আপনার খুব জ্বর হয়
হৃদযন্ত্রের গতি বেড়ে যায়
বুকের ক্ষতের চারপাশে নতুন করে ব্যথা হলে বা আগের ব্যথাই আরও বেড়ে গেলে
বুকের ক্ষতের চারপাশটা লাল হয়ে গেলে বা বুকের ক্ষত থেকে রক্ত পড়লে বা অন্য কিছু বের হলে।

Quick Book

Request A Call Back

X